গবেষকরা লাল সাগরের অংশ, আকাবা উপসাগরে বিরল গভীর-সাগরীয় লবণ পুল আবিষ্কার করেছেন। এই পুলগুলো অত্যন্ত লবণাক্ত এবং অক্সিজেনহীন, যার কারণে এদের "মৃত্যু পুল" বলা হয়। এই জায়গাগুলোতে এমন অনন্য মাইক্রোব রয়েছে যা চরম পরিবেশে বেঁচে থাকে, যা আমাদের প্রকৃতির অসীম শক্তি ও জীবনের বিস্ময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়।
২০২০ সালে মিয়ামির ইউনিভার্সিটির ড. স্যাম পারকিস নেতৃত্বে একটি দল এই আবিষ্কার করেন। তারা ওশেনএক্সপ্লোরার গবেষণা জাহাজে বিশেষ একটি পানির নিচের রোবট ব্যবহার করেন। তারা একটি বড় পুল, প্রায় ১০,০০০ বর্গমিটার এবং তিনটি ছোট পুল আবিষ্কার করেন, যা প্রায় ১.১ মাইল গভীরে অবস্থিত, যা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার জলজ পরিবেশের গুণগত বৈচিত্র্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
এই পুলগুলো উচ্চ লবণমাত্রা এবং অক্সিজেনহীন পরিবেশ থাকার কারণে চরম পরিবেশ হিসেবে বিবেচিত। তবুও, এখানে ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া জাতীয় চরমজীবী মাইক্রোব রয়েছে। এই মাইক্রোবগুলো অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন পৃথিবীতে জীবন কিভাবে শুরু হয়েছিল এবং অন্য গ্রহে জীবন খোঁজার সম্ভাবনা কী হতে পারে।
এই পুলের তলদেশের সেডিমেন্ট অতীতের বিভিন্ন ঘটনা যেমন সুনামি, বন্যা এবং ভূমিকম্পের তথ্য ধারণ করে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে বড় ধরনের বন্যা প্রায় প্রতি ২৫ বছর এবং সুনামি প্রায় প্রতি ১০০ বছর পর পর ঘটে।
পুলগুলো উপকূলের কাছে হওয়ার কারণে এদের মধ্যে ভূমি থেকে আসা খনিজ পদার্থ থাকে, যা হাজার হাজার বছরের সুনামি, বন্যা ও ভূমিকম্পের ইতিহাস সংরক্ষণ করে।
এই আবিষ্কার জীবপ্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। এই পুলের মাইক্রোবগুলো এমন যৌগ উৎপাদন করে যার চিকিৎসা ক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং ক্যান্সারবিরোধী গুণাবলী।
এই তথ্যগুলো আমাদের পৃথিবীর চরম বাস্তুতন্ত্র এবং অন্য গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে। গবেষকরা এই পুলগুলো নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন জীবনের উৎপত্তি এবং পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে।